শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
কমিউনিটিতে ক্ষোভ : পরিবারে মাতম : দুর্বৃত্ত ও পুলিশের হাতে

নিউইয়র্ক-মিশিগানে এক মাসে ৫ বাংলাদেশি নিহত

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

নিউইয়র্ক-মিশিগানে এক মাসে ৫ বাংলাদেশি নিহত

বর্হির্বিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি খুনের শিকার হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই বাড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অপমৃত্যুর ঘটনা। বিশেষ করে দুর্বৃত্ত ও পুলিশের হাতেই ঘটেছে এসব হত্যাকান্ড। গত একমাস নিউইয়র্ক এবং মিশিগানে পুলিশ ও দুর্বৃত্তের হাতে ঘটেছে ৫টি খুনের ঘটনা।

এসব ঘটনার মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিউইয়র্ক সিটির ওজনপার্কে পুলিশের গুলিতে এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ ও মিশিগানের ওয়ারেন সিটিতে এক বাংলাদেশী তরুণ নিহত হয়। এর আগে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় ৭৬ বছর বয়স্ক বাংলাদেশী একজনকে কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্ত আঘাত করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি ।


এছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের গুলিতে আরো দু’জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন কানাডা সীমান্তবর্তী নিউইয়র্ক স্টেটের অন্যতম বাংলাদেশী অধ্যুষিত সিটি বাফেলোতে। এছাড়া বাংলাদেশী নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে বাংলাদেশী মালিকানাধীন একটি দোকানে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে কেবল বাফেলোতে দুই বাংলাদেশী হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে পুলিশী তদন্তে ঘাটতি রয়েছে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রে উপরোল্লিখিত ঘটনাগুলো যে প্রথমবার ঘটেছে তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সিটিতে বাংলাদেশীদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। নিউইয়র্ক সিটিতে যেহেতু বাংলাদেশী সংখ্যা অধিক, অতএব এখানে বাংলাদেশীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে বেশি। আশপাশের স্টেটগুলোর মধ্যে কানেকটিকাটের কিছু সিটি, পেনসিলভেনিয়ার বাংলাদেশী অধু্যূষিত ফিলাডেলফিয়ায় এবং জর্জিয়ায়ও এ ধরনের হামলা প্রায় নিয়মিত ঘটনা।


প্রতিটি ঘটনা যদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে ইচ্ছাকৃত বা দায়িত্বহীনভাবে। গত ২৭ মার্চ নিউইয়র্ক সিটির ওজোন পার্ক এবং এর দুদিন পর মিশিগানে সংঘটিত পৃথক দুটি ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক দুই বাংলাদেশী তরুণকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের আচরণ ছিল মারমুখী। ওজোন পার্কে পুলিশ মানসিক ভারসাম্যহীন এক বাংলাদেশী তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।

পুলিশের বক্তব্য ছিল যে ওই তরুণ একটি কাঁচি হাতে পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাবে এগিয়ে আসছিল। পুলিশ তাকে নিস্ক্রীয় করার জন্য তার শরীরের অন্য কোথাও গুলি করতে পারত। কিন্তু তা না করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে এবং তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। মিশিগানের পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক বাংলাদেশী তরুণকে তেমন কোনো সতর্কতা উচ্চারণ বা আহত করার উদ্যোগ না নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে।


সাম্প্রতিককালে এতো অল্প সময়ে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এতগুলো নিরীহ প্রাণ ঝরে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি যেমন ক্ষুব্ধ, তেমনি তারা শোকে মুহ্যমান। বিশেষ করে বাফেলোতে গত ২৭ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে দুই বাংলাদেশীর নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশী কমিউনিটি। তারা প্রতিটি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, ঘাতকদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে সরকারের প্রতি।

উন্নত জীবন-জীবিকার উদ্দেশ্যে ভয়াবহ মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়েও অনেকে পাড়ি জমাচ্ছেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। কিন্তু সুখ ভোগের স্পর্শ পাওয়ার আগেই অপমুত্যুর শিকার হচ্ছে অনেকে। ভেঙ্গে যাচ্ছে তাদের আমেরিকার স্বপ্ন। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অপরদিকে ঘাতকরাও পাড় পেয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। বিশেষ করে আইনের ফাঁকে হত্যাকারী পুলিশ থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

কমিউনিটির দুর্বলতা ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনেক হত্যাকারী দুর্বৃত্ত এড়িয়ে যাচ্ছে গ্রেফতার। দুই তরুণকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু সংঘবদ্ধ আকারে কোনো প্রতিবাদ হয়নি। ফলে এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে না তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। জ্যামাইকায় গত ৫ মার্চ এক বয়োবৃদ্ধ বাংলাদেশীকে এক কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্ত অকারণে ধাক্কা দিয়ে সাইডওয়াকে ফেলে দেয়।

তিনির তার বার্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে গুরুতর আহত হয়ে তিনি পাঁচদিন পর হাসপাতালে মারা যান। সিটির ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলাদেশী ক্যাব চালক, দোকানি, এমনকি পথচারিদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সময়ের ব্যবধানে ১০ লক্ষাধিক বাংলাদেশী এখন বসবাস করছে যুক্তরাষ্ট্রে। আর এসব প্রবাসী বাংলাদেশীর অধিকাংশেরই কর্মস্থল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছেন তারা। তবে ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে প্রয়োজন দৃঢ় ঐক্য ও মূলধারার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার।

ওজোনপার্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত

ওজোন পার্কে উন রোজারিও (১৯) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বাংলাদেশী কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে গত ২৭ মার্চ বুধবার বিকেলে। এনওয়াইপিডি’র ভাষ্য অনুসারে উক্ত যুবক কুইন্সের এক অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশ অফিসারদের দিকে কাঁচি হাতে হামলা চালাতে এলে পুলিশ তাকে গুলি করে। ওজোন পার্কের ১০১-১২ ১০৩ স্ট্রিটের এক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর দোতলার এক অ্যাপার্টমেন্টে এ দুঃখজনক ঘটনা ঘটে।

এনওয়াইপিডির চিফ অফ পেট্টল জন শেল জানান, ৯১১ এ কল পেয়ে দুই মিনিটের মধ্যে বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌছেন এবং প্রাথমিকভাবে টিজার ব্যবহার করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে নিরস্ত করতে না পেরে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন।ঘটনাস্থল থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

উইন রোজারিও’র মা ইভা কস্টা (৪৯) বিলাপ করে বলছিলেন, “আমার ছেলে মরে গেছে। সে নিস্পাপ ছিল। সে পুলিশকে ভয় করেনি। সে তাদের ওপর হামলা করেনি।” তিনি তার পুত্রের প্রাণহানি তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেন। উল্লেখ্য, পরিবারটি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর কুইন্সে বসবাস করছিল।

সে কখনো মন্দ কাজে জড়ায়নি। উইনের ছোট ভাই উৎস রোজারিও’র মতে তার ভাইয়ের মানসিক অবস্থা মাসে একবার খারাপ থাকতো। অনেক সময় সে ওষুধ সেবন করতো না। এছাড়া সে খুব ভালো মানুষ ছিল। তার জীবনের বড় লক্ষ্য ছিল আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া।

জ্যামাইকায় দুর্বৃত্তের হামলায় জাকের হোসাইন খসরুর মৃত্যু

নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় হিলসাইড এভিনিউ এর পাশে ১৬৭ স্ট্রিটে গত ৫ এপ্রিল দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হন জাকের হোসাইন খসরু (৭৬)। পাঁচ দিন পর গত ১০ এপ্রিল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জাকের হোসাইন খসরু ৫ এপ্রিল শুক্রবার জু’মা নামাজ শেষে বিকেল তিনটার দিকে ট্যাক্স ফাইল করার জন্য ১৬৭ স্ট্রিটে মান্নান গ্রোসারির উল্টো পাশে সিপিএ মাহমুদুল হকের অফিসে যান। সিপিএ এ সময় অফিসে না থাকায় তিনি সাইডওয়াকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

এ সময় এক দুর্বৃত্ত গাড়ি থেকে নেমে উত্তেজিত অবস্থায় বিনা কারণে প্রচণ্ড জোরে জনাব খসরুকে ধাক্কা দেয়। তিনি ধাক্কা সামলাতে না পেরে সাইডওয়াকে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত লাগার ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ও মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পুলিশ ও ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে খসরুকে সেখান থেকে নিয়ে জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১০ এপ্রিল তিনি মারা যান।

মিশিগানে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশিকে খুন

মিশিগানে ওয়ারেন সিটি পুলিশের গুলিতে হোসেন আল রাজি (১৮) নামে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়। গত ১২ এপ্রিল দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ওয়ারেন সিটি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্য দুপুরে ৯১১ এ পরিবারের পক্ষ থেকে একটা ফোন আসে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছান। পুলিশ কর্মকর্তারা ওই যুবকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখতে পান এবং অস্ত্র ফেলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই যুবক তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। পরে আহত অবস্থায় যুবককে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্য ঘোষণা করেন।

Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.